Home »
free tips
» ~না খেয়ে উঠে গেলি কেন তোর বাবাও না খেয়ে শুয়ে পড়ল(মা)
~না খেয়ে উঠে গেলি কেন তোর বাবাও না খেয়ে শুয়ে পড়ল(মা)
~একবার বলছি না যতক্ষণে নতুন মোবাইল কেনার টাকা না দিবা ততক্ষণে আর এই বাসার কিছু আমি খাব না তবুও আবার ভাত নিয়ে আসছ
কেন? (আমি)
~বাবা তুই তো জানিস তোর বাবা কত টাকা বেতন পায় তার উপরে তোর বোনটাকে কলেজে ভর্তি করাতে এতগুলো টাকা গেল একটা মাস অপেক্ষা কর সামনের মাসে তোর বাবা বেতন পেলেই তোরে টাকা দিবে বলছে(মা)
~দুনিয়ার সব কিছুই চলে শুধু আমি টাকা চাইলেই টাকা থাকে না তোমাদের
~বলছি তো সামনের মাসে টাকা দিব তখন মোবাইল কিনিস এই ১০-১৫দিন এই ফোনটা চালা এট তো ভাল এখনও,খেয়ে নে বাবা
~একবার বলছি না খাব না তুমি যাও (কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলাম সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম টেবিলের উপরে একটা চেক)
~মা.....মা.....
~কি হইছে?
~এটা কিসের চেক?
~তোর বাবা রেখে গেছে তোর ফোন কেনার টাকা উঠিয়ে নিতে বলছে
~ওহ! আচ্ছা যাও
বাসা থেকে বের হয়ে ভার্সেটিতে গেলাম ভার্সেটি থেকে একটা বন্ধুকে নিয়ে গেলাম ফোন কিনতে ১৩০০০ টাকায় একটা ফোন কিনলাম ব্যাক কভার কেনা দরকার কিন্তু দুপুর হয়ে গেছে তাই একটা রেস্তোরায় ঢুকলাম নাস্ত করার জন্য হঠাৎ দেখলাম আব্বু রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে কোথায় যেন যাচ্ছে কিন্তু এই রোদের মধ্যে কোথায় যাচ্ছে আর আব্বুর অফিস
তো এখান থেকে হেটে গেলে প্রায় ১০ মিনিট লাগবে একটু কৌতূহল জাগল আর ফোনটাও আব্বুকে দেখানো দরকার তাই হোটেলের বিল দিয়ে বন্ধুটাকে বিদায় জানিয়ে হোটেল থেকে বের হলাম ততক্ষণে আব্বুকে দেখলাম রাস্তার পাশের একটা চায়ের দোকানে ঢুকল। এখন তো লাঞ্চ করার সময় এই সময় আব্বু চায়ের দোকানে চা খেতে গেল কেন কিছুই বুঝলাম না তাই আর গেলাম না দুরেই দাড়িয়ে রইলাম ১০মিনিট পরে দেখলাম আবার বের
হয়ে হেটে হেটে অফিসের দিকে যাচ্ছে আমি আর কভার কিনতে গেলাম না বাসায় ফিরে এলাম গোসল করে খেয়ে ঘুম দিলাম ঘুম ভাঙ্গল সন্ধায় রাতে খাওয়ার সময় আব্বুর সাথে দেখা
~ফোন কিনছো?
~হুম
~ভার্সিটি যাও ঠিক মত?
~হুম
~ঠিক আছে এখন খাও
এরপরে আমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম সকালে ভার্সিটি যাওয়ার সময় চায়ের দোকানটা দেখে গতকালের ঘটনা মনে পড়ল তাই চিন্তুা করলাম আজও আব্বু
আসে কিনা দেখব তাই ২টা ক্লাস করেই বের হয়ে আসলাম ছোট্ট চায়ের দোকানটার সামনে আসতে আসতে প্রায় ১২:৪৫ বেজে গেল এরপরে একটু দূরেই অপেক্ষা করতে লাগলাম ১:৩০ এর দিকে আব্বুকে দেখলাম হাটতে হাটতে দোকানটার ডুকল আবার ১০-১৫ মিনিট পরে বের হয়ে অফিসের দিকে হাটা শুরু করল আজও আমি আব্বুর সামনে
গেলাম না। আব্বু চলে যাওয়ার পরে অনেকটা কৌতূহল নিয়েই চায়ের দোকানটায় গেলাম। যাওয়ার পরে দোকানদার আঙ্কেলের কাছে আব্বুর
বিষয়ে জানতে চাইলাম
~আঙ্কেল একটু আগে যে শার্ট প্যান্ট পড়া এক ভদ্রোলোক আপনার দোকান থেকে বের হলো উনাকে চিনেন আপনি(আমি)
~হয় চিনমু না কেন বাবা উনি তো আমার দোকানে প্রত্যেকদিন আয়
~কেন আসে একটু বলবেন প্লিজ
~বাবা ওই স্যার আমার দোকানে প্রত্যেকদিন দুপুরবেলা আহে আর এক কাপ চায়ের লগে এক পিস কেক খায়। এই স্যারই আমার সবচেয়ে পুরনো কাস্টমার
~আচ্ছা আঙ্কেল আসি পরে আবার একদিন আসব এটা বলে দোকানটা থেকে বের
হলাম রাস্তায় হাটতে হাটতে ভাবতে লাগলাম আব্বু লাঞ্চের সময় শুধু এক কাপ চা আর কেক খেয়ে অফিস করে আর বাসায় আমাদের বলে লাঞ্চ করছে। আব্বুর অফিসে লাঞ্চ করার ব্রেক দেয় ১:১০ এ আব্বু অফিস থেকে বের হয়ে ২০ টাকা রিকশা ভাড়া বাচাতে এই রোদের মধ্যে এতদূর হেটে আসে এরপরে আব্বুর অফিসের পাশের রেস্টুরেন্ট গুলো উন্নত মানের ওখানে খেলে দাম বেশি হবে তাই এতদূর আসেন, এরপরে দুপুরে ভাত খেলে মোটামুটি ১৫০ টাকা খরচ হবে তাই তিনি ১০ টাকার নাস্তা দিয়ে কোনমতে ক্ষুধা সামলান মানে ২০+২০=৪০টাকা রিকসা ভাড়া,১৪০টাকা খাবার খরচ বাচিয়ে আমাদের পারিবারের কাজে লাগান বিনিময়ে তিনি ১৫+১৫=৩০মিনিট রোদে পুড়েন সাথে ২:৩০-৫:৩০=৩ ঘন্টা ক্ষুধা অবস্থায় থাকেন কারন এক পিস কেক খেয়ে এক ঘন্টার বেশি কোন ভাবেই থাকা সম্ভব
নয়। এত কষ্ট করে টাকা রোজগার করে
আর আমি প্রত্যেকদিন ১০টাকা দিয়ে
বাসে যেতে ঝামেলা হয় বলে ৫০টাকা দিয়ে রিকশায় যাই,ফোন থাকার পরেও ১৩০০০টাকা দিয়ে নুতন
ফোন কিনলাম,প্রত্যেকদিন নেটের পিছনে ৫০+ টাকা খরচ করি কথাগুলো ভাবতে ভাবতে দুচোখ ভিজে আসছে হঠাৎ রিকশাওয়ালার ডাকে বাস্তবে
ফিরে আসলাম
~মামা আজই যাইবেন না
(প্রত্যেকদিন আসতে আসতে পরিচিত
হয়ে গেছি)
~না মামা আজ একটু কাজ আছে
এটা বলে হাটা শুরু করলাম যে বাবা
২০টাকা বাচানোর জন্য ১৫মিনিট
রোদে হাটতে পারে তার ছেলে
হয়ে বাসে না গিয়ে রিকশায় চরাটা
অনেকটা বাবার মুখে চুন-কালি
মাখানোর মতোই এর পরে একটু সামনে
গিয়ে বাস ধরে সোজা বাসায়
পৌছালাম। মা আমাকে দেখে
দৌড়ে ছুটে আসলেন
~কিরে আবির তোর এ অবস্থা কেন? এরকম ঘেমে গেছিস কিভাবে রিকশার হুক তুলে ছিলি না এত রোদ
লাগল কিভাবে?
~আম্মু আমার কিছু হয়নি আমি ঠিক আছি
তুমি তোমার কাজে যাও
আম্মু অনেকটা অবাক দৃষ্টিতে আমার
সামনে থেকে গেল এর পরে ২ গ্লাস
পানি খেয়ে শার্ট টা পাল্টে
গেঞ্জি পরে ফোন থেকে সিম আর
মেমোরি খুলে ফোনটাকে আবার
প্যাকেটে ডুকালাম মার্কেটে এক
পরিচিত বড় ভাই আছে উনার কাছে
যেতে হবে। যার বাবা খাবারের
টাকা বাচাতে সামান্য ১০টাকার
নাস্তা খেয়ে ৩-৪ ঘন্টা কাটিয়ে
দেয় তার কাছে ১৩০০০ হাজার টাকার
ফোন মানায় না, এই ফোন আমার
দ্বারা ব্যাবহার করা সম্ভব না তাই
আবার বেরিয়ে পড়লাম দরজা প্রর্যন্ত
আসতেই মায়ের ডাক
~কিরে ২টা বাজে এখন না খেয়ে
কোথায় বোরোচ্ছিস?
~মা ২-১বেলা না খেলে মানুষ মারা
যায় না আর আমিতো মাত্র ২ঘন্টা হল
কিছু খাইনি
অতঃপর মায়ের কথায় কান না দিয়েই
চলে আসলাম মার্কেটে এসে বড়
ভাইকে সব বলার পরে বড়ভাই আমাকে
১১০০০হাজার টাকা দিল আর বলল
~ভাই এর থেকে বেশি আর আমি দিতে
পারলাম না আর ভাল থাকিস ভাই আর
কোন দরকার হলে বলিস
~আচ্ছা ভাই দোয়া কইরো এখন আসি
এর পরে টাকা নিয়ে বাসায় আসলাম
পথে বাসে খুব ভিড় ছিল সাথে জ্যাম
তো আছেই বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ৬ টা বেজে গেছে বাসায় পৌছেই দেখলাম আব্বু অফিস
থেকে ফিরে আসছে আর ছোট বোনটাও কলেজ থেকে সবাই সামনের রুমেই বসা। ফ্রেস হওয়া দরকার তাই কোন কথা না বলেই আমার রুমের দিকে পা বাড়ালাম কিন্তু ২ পা না দিতেই আব্বুর ডাক
~তুই নাকি দুপুরে কিছু না খেয়েই বেরিয়েছিস?
~হুম তেমন ক্ষুধা ছিল না তাই খাইনি
~ক্ষুধা ছিল না এটা কেমন কথা সেই সকালে খেয়েছিস আর এখন বিকাল ৬টা এতোক্ষনে তোর ক্ষুধা লাগেনি আর তোর মুখমণ্ডলের এ অবস্থা কেন
সারাদিন কি শহরের রোড ঝাড়ু দিছিস?
~কেউ যদি টাকা বাচানোর জন্য ৩০ মিনিট রোদে হেটে দুপুরে চা আর কেক খেতে পারে তাহলে আমিও ৫ ঘন্টা না খেয়ে আথবা শহরের ঝাড়ুদার হতে পারি।
~কি বলছিস তুই কে ৩০ মিনিট হাটে দুপুরে চা-কেক খায় কিছুই তো বুঝতে পারছি না ঠিক করে বল তো কি হইছে (মা)
~আমি আর কি বলল আব্বুর কাছে যানতে চাও কি হয়েছে
~এই আবির কি বলছে কিছুই তো বুঝতে পারছি না তুমি কিছু যান(মা)
~ও কিছু না বাদ দাও এই তুই হাত মুখ ধূয়ে খেতে আয়(আব্বু)
~তুমি যখন বলবে না তখন আমিই বলছি
আব্বু বাসায় এসে আমাদের কাছে
বলে দুপুরে লাঞ্চ করছে কিন্তু শেষ
কবে আব্বু দুপুরে লাঞ্চ করছে এটা হয়ত
আব্বু ভূলে গেছে কারন আব্বু
প্রত্যেকদিন দুপুরে মাত্র এক কাপ চা আর
এক পিস কেক খায় আর এটা কোন খাবার হল আর খাওয়ার জন্য
প্রত্যেকদিন ১৫ মিনিট হেটে দূরে
একটা চায়ের দোকানে আসে।
আব্বু অপরাধীর মত নিচের দিকে
তাকিয়ে আছে কোন কথা বলছে না
হঠাৎ করেই আমি গিয়ে আব্বুর পা জড়িয়ে ধরে
~আব্বু আমাদের মাফ করে দেও আমরা কখনো তোমার কষ্ট বুঝতে চেষ্টা করিনী সবাই সবার বিলাসিতা নিয়ে থেকেছি কিন্তু কেউ কখনো
তোমার কথা চিন্তা করিনী আমাদের ক্ষমা করে দেও আর আমার ফোন লাগবে না যেটা আছে ঐটায় ই চলবে এই নাও টাকা এখানে ২হাজার টাকা
কম আছে প্রয়োজন হলে সামনের মাস থেকে আমি টিউশনি করাব তবুও তুমি নিজেকে এখন একটু আরামে রাখ এতদিন আমরা আমাদের ভূল বুঝতে
পারিনি আর তুমিও আমাদের কিছু বলনি শুধু যন্ত্র মানবের মত মুখ বুঝে খেটে গেছ এই পরিবারটার জন্য
আব্বু আমাকে হাত ধরে দাড় করালেন দেখলাম আব্বুর দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে কিছু না বলে আমাকে জরিয়ে ধরে কাদঁতে লাগল ততক্ষণে ছোট
বোনটাও আব্বুকে জরিয়ে ধরেছে আর আম্মু দাড়িয়ে দাড়িয়ে শাড়ির আচল দিয়ে চোখ মুচছে। কিছুক্ষণ পরে আব্বু আমাকে ফ্রেস হয়ে খেতে বলে রুমে
চলে গেল। এর পরেরদিন থেকে আব্বুকে দুপুরের খাবার বাসা থেকেই দিয়ে দেয়া হত আর আমার বিলাসিতাও কমে গেছে এখন বাসে করেই ভার্সেটি
যাই আর একটা টিউশনিও করাই যদিও বাসায় বলিনি বললে হয়ত টিউশনিটা ছেরে দিতে হবে আর এভাবেই কেটে যাচ্ছে আমাদের সুখের দিনগুলো ।
সবশেষে পাঠকদের উদ্দেশ্যে এত টুকই বলতে চাই সবাই এই বাবা নামক যন্ত্র মানব গুলিকে বুঝতে শিখি। এদের যতক্ষণ জীবন আছে ততক্ষণ খেটে যাবে তবুও মুখ ফুটে একটু কষ্টের কথা বলবে না,
আপনার আমার সুখের কথা চিন্তুা করেই এদের সুখের কথা ভূলে যায় আমাদের উচিৎ এদের সুখের কথা চিন্তু করা যতটুক সম্ভব এদের মনের ছোট ছোট সুপ্ত ইচ্ছাগুলোকে পুরন করার চেষ্টা করা তাহলেই এ যন্ত্র মানব গুলোর থেকে সুখি আর কেউ থাকবে না।
0 comments:
Post a Comment
Dear Visitor
For coming to this site
Thank you