আল্লাহ সর্বশক্তিমান ।


Thursday, July 13, 2017

রক্তচাপ! উচ্চ রক্তচাপ...

মেয়েটা নতুন। কুশল জিজ্ঞেস করে বল্ল, আপনার প্রেশার মাপতে হবে এখন, এরপর রক্ত পরীক্ষা করবো। এসবের জন্য ৩ ঘন্টা আগে থেকে খাবার বন্ধ রাখতে হয়, সেটা জানেন? আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। সকালের ওষুধ নিয়েছেন? বল্লাম, হ্যাঁ।
হাতে প্রেশার মাপার যন্ত্রটা পরাতে পরাতে জিজ্ঞেস করলো, ইনজেকশনে ভয় পান? আমি কিন্তু খুব এক্সপার্ট। বুঝতেই পারবেন না। একটা কাষ্ঠ হাসি দিলাম। চমৎকার করে হেসে নিয়ে এবার বল্লো, আপনি যদি হিন্দি জানেন, সেটা বলতে পারেন, আমি ভালো বলতে পারি না, কিন্তু বুঝি! উত্তরে বল্লাম, আমি ইন্ডিয়ান নই, বাংলাদেশের। একটু অপ্রস্তুত হয়েই সামলে নিলো। দু:খিত, আসলে এখানেতো অনেক বেশী ভারতীয় তাই ভেবেছিলাম। আর আপনার রেকর্ডটাও এখনও দেখতে পারিনি আমি।
মেয়েটার চোখ কুঁচকে যায়, চেহারায় একটা বিস্ময়ভাব ফুটে উঠে। এরকম চেহারার সাথে আমার পরিচয় আছে। অনেকবার এমন হয়েছে। প্রথমবার হয়েছিলো স্কয়ার হাসপাতালে। সিমনের জন্য রক্ত দিতে গেছি। হাড্ডি তুড়নেওয়ালা কৈরি ডাক্তার সাথে। একজন নার্স প্রেশার মাপতে শুরু করলেন... কৈরি ডাক্তার জুনিয়র এক ডাক্তারকে পেয়ে গেজাতে শুরু করেছে। মেয়েটা একটু অস্বস্থি নিয়ে সেই পিচ্চি ডাক্তারকে ডাকলো। সে আসলো, চোখ মোটা করে একবার প্রেশারের কাটা দেখে আরেকবার দেখে আমাকে। কৈরি বল্ল, আবার মাপো... আরও একটু বেড়ে গেলো সম্ভবত! এরা ভাবলো রক্ত দিতে হবে বলে ভয় পেয়েছি! কী অপমান! কী অপমান! রক্ত দিয়ে টাকা নিলে এইখাতে ৩০/৩৫ হাজার টাকা ইনকাম করে ফেলতাম ততদিনে, আর আমারে বলে কীনা ভয় পেয়ে প্রেশার বেড়ে গেছে! ব্যাগ থেকে টান মেরে ডিসেম্বর মাসের কার্ডটা দেখালাম। তারা তবু রক্ত নেবেনা! কৈরি নানান রকমের মিঠা মিঠা কথা বলে। আমি বলি, আরে মিয়া আমার প্রেশার এমনই। সবসময় হাই থাকে। সে বল্ল, এটা ওখানকার ডাক্তারকে বুঝতে হবে! বসেই থাকলাম। মেজাজ খারাপের সাথে প্রেশার সম্ভবত আরো বাড়ছিলো। শেষমেষ কৈরি আমারে নিয়া হাসপাতাল থেকেই বের হয়ে আসলো। কিন্তু আর একা ছাড়ে না! কি সমস্যায় পড়লাম! ব্যাপক হাউকাউ করেও তারে ছাড়ানো গেলোনা, গাড়িতে করে ন’ বাড়িতে দিয়ে এলো। পুরা রাস্তায় ‘উৎফুল্ল’ করার প্রক্রিয়া হিসাবে নানা ইতং বিতং গল্প করলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। মেজাজ খারাপ করে নজ্রুলিস্লামের সোফায় শুয়ে থাকলাম। ও আমার আল্লা! সেইটাও বেশি সময় পারলাম না। সেলিনা বেগম তুলি তার চরিত্রের উল্টা ঘটনা ঘটায়া ফোন করে বসলো! মৃদু আর্তনাদসহ বল্লো,- ‘তুমার কিতা ওইছে?’ পুরা তব্দানুভূতিতে পড়ে গেলাম। যতই বলি, কুন্তা ওইছেনা, ঠিকাছি, ততই পেম বৃদ্ধি পায়! একটু প্রেশার বাড়ছে, রক্ত দেয়ার যন্ত্রপাতি দেখে ভুই পাইছি এই কথা বলে পার পেলাম। জিগাইলাম, প্রিয়তমা, তুমারে এই খবর কে দিছে? বল্লো, শাওন দিয়েছে। শাওনরে ফোন দিলাম, সে ঘসেটি বেগমের মতো হাসতে লাগলো। কৈরি নাকি ফেসবুকে স্টেটাস ঝেড়ে দিছে, সেইটা দেখে সে আমার কোমলপ্রাণ স্ত্রীকে দিয়ে একটু ডিস্টাপিং করালো!
তো এই হলো আমার প্রেশার বিষয়ক প্রাথমিক গল্প। এখন পর্যন্ত যতজন আমার হাতে ব্লাড প্রেশারের মেশিন লাগিয়েছে ততজনই তার লাইফের অন্যতম আজব বস্তু দেখার মতো করে দৃষ্টিপাত করেছে আমার দিকে। সেই অর্থে এই সদ্য তরুণী নার্স কিছুই না। সে প্রায় দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গেলো। ফিরে এসে বল্ল, ডাক্তার একটু পরেই আপনাকে দেখবেন, মন শান্ত করে এখানে বসুন। মন অশান্ত করার কিছুই নাই। এসব অভ্যাস হয়ে গেছে। মিনিট বিশেক পরে ইন্টারকম বাজলো। ফোন রেখেই আবার প্রেশার চেক করলো। চেহারা দেখে বুঝলাম, মন-টন শান্ত রেখে কোন ফায়দা হয় নাই। পাশের রুমেই ডাক্তার। সেখানে গেলাম। ডাক্তার গত দেড় বছর থেকে আমাকে দেখছেন। নভেম্বর থেকে প্রতি সপ্তায় একবার। ইনি আবার প্রেশার মাপলেন, ১৫২/১০০। উপরেরটা কমছে, ২৫ নেমে এসেছে। কিন্তু নিচেরটায় সমস্যা। মাত্র ১০ কমেছে। আরও ৪ সপ্তা ওষুধ খেতে হবে, হাঁটতে হবে প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘন্টা, লাল মাংশ খাওয়া একদম বন্ধ, লবন কম খেতে হবে। মুখস্থ ওষুধ-পথ্য। সাথে নতুন যেটা বল্লেন, সেটা হলো ৪ সপ্তা পরে যদি নিচেরটা ৯০ এর নিচে না নামে, ডাবল ডোজ করে দেবেন ওষুধ। বাধ্য আধা-বয়েসির মতো মাথা নাড়লাম।
বাবাইকে স্কুলে দিয়ে পাক্কা তিরিশ মিনিট জোরে জোরে হাঁটি। একদিন স্কুল থেকে বায়ে, আরেকদিন ডানে। দুপাশে দুটো পার্ক। দুটোই নদীর তীরে। ছোট্ট একটা নদী। বাঁধানো পাড়। স্বাস্থ্যসচেতন বুড়োদের দল সেখানে ভীড় করে থাকেন। মাঝে মাঝে তাবলীগের লোকজন। যিশুর পথে মানুষকে আহ্বান করেন তারা। প্রায় দু-মাস ধরে এরা দেখছেন। চেহারা পরিচিত হয়ে গেছে। মুচকি হাসি থেকে এখন হায়/ হ্যালো পর্যন্ত পৌঁছেছে। আজ ‘শুভ সকাল’ বল্লেন তাদের দুজন। একটা কাগজ এগিয়ে দিলেন। হাসি মুখে সেই কাগজ নিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। আর দু সপ্তাহ আছে হাতে। এর ভেতর এসপার ওসপার কিছু না হলে ১০ মি.লি গিলতে হবে রোজ...দৌঁড়াই...
প্রাতঃকালে ইশ্বরের ভালোবাসা
পেলাম দুই সন্তানবতীর কাছে
তাদের বাড়ানো ভাঁজপত্রে,
ইশ্বর মুচকি হাসছেন,
একটা নবজাতক বৃক্ষে।
জীবন ধারণের জন্য ইশ্বরের
ভালোবাসার সাথে কাগুজে
নোটও লাগে। আমি দিনমজুর;
আমাকে হাঁটতে হবে। বায়বীয়
ভালোবাসা নিয়ে দৌড়াই...


0 comments:

Post a Comment

Dear Visitor
For coming to this site
Thank you